ঢাকা ০৯:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫, ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শবে বরাতের ফজিলত ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১১:৫৯:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ১০০১৯ বার পড়া হয়েছে

শবে বরাতের ফজিলত ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল

আগামী বার্তা অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শবে বরাতের ফজিলত ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল

ইসলামি বর্ষপঞ্জির শাবান মাসের ১৫ তারিখ রাতটি “শবে বরাত” বা “লাইলাতুল বারাআত” নামে পরিচিত। এই রাতটি মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও মহিমান্বিত। আরবি শব্দ “বারাআত” অর্থ মুক্তি, আর “লাইলাতুন” অর্থ রাত। এ রাতে আল্লাহ তাআলা বান্দাদের গুনাহ থেকে মুক্তি দান করেন এবং আগামী বছরের তাকদির নির্ধারণ করেন বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এই পবিত্র রাতের সঠিক আমল ও ইবাদত সম্পর্কে জানা প্রতিটি মুমিনের জন্য আবশ্যক।

শবে বরাতের ফজিলত

১. গুনাহ মাফের রাত: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

“শাবানের ১৫ তারিখ রাতে আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং মুশরিক, বিদ্বেষ পোষণকারী ও সম্পর্কচ্ছেদকারী ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন।” (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৯০)

 

৩. ইবাদতের বিশেষ সুযোগ: এই রাতে নফল ইবাদতের সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়।

শবে বরাতের আমল

১. নামাজ ও কুরআন তিলাওয়াত

  • নফল সালাত: এ রাতে ১২ রাকাত নফল সালাত আদায়ের কথা বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহার পর সুরা ইখলাস ১০ বার পড়া যায়। সালাত শেষে ১০০ বার ইস্তিগফার ও দরুদ পাঠ করুন।
  • কুরআন তিলাওয়াত: সুরা ইয়াসিন, সুরা দুখান, সুরা মুলক ও সুরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো (আমানার রাসুল) তিলাওয়াত করুন। এগুলো মৃত্যুযন্ত্রণা লাঘব করে ও রিজিকে বরকত আনে।

২. ইস্তিগফার ও দোয়া

  • “আস্তাগফিরুল্লাহাল আজিম আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।”
    (অর্থ: আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি মহান আল্লাহর কাছে, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। আমি তাঁর কাছেই তওবা করছি।)
  • দোয়ায় বেশি বেশি এই কথাগুলো বলুন:
    “আল্লাহুম্মা ইন্নিকা আফুয়্যুন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি।”
    (হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; তাই আমাকে ক্ষমা করুন।)

৩. মৃতদের জন্য দোয়া ও সদকা

  • কবরস্থানে গিয়ে মৃত আত্মীয়-স্বজনের জন্য দোয়া করুন। রাসুল (সা.) শাবানের মধ্যবর্তী দিনে (১৪ তারিখ দিবাগত রাত) জান্নাতুল বাকিতে গিয়ে মৃতদের জন্য দোয়া করতেন।
  • গরিব-দুঃখীদের মধ্যে খাবার, অর্থ বা কাপড় বিতরণ করুন। সদকায় বরকত বৃদ্ধি পায়।

৪. রোজা রাখা

শাবান মাসে নফল রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। রাসুল (সা.) শাবান মাসে সবচেয়ে বেশি নফল রোজা রাখতেন। (বুখারি: ১৯৬৯) ১৫ শাবানের দিন (দিনের বেলা) রোজা রাখলে অতীতের গুনাহ মাফ হয় বলে কিছু বর্ণনায় এসেছে।

৫. পরিবার-পরিজনকে নসিহত করা

এই রাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ইবাদত করুন, গুনাহ থেকে তওবার গুরুত্ব বোঝান। শিশুদের সাথে ইসলামি গল্প শেয়ার করুন।

সতর্কতা ও ভুল ধারণা

১. আতশবাজি বা অনর্থক কর্ম: কোনো প্রকার আতশবাজি, পটকা ফোটানো বা ইসলামবিরোধী কর্মে লিপ্ত হওয়া নিষেধ।
২. হালুয়া-রুটির অন্ধ বিশ্বাস: শবে বরাত উপলক্ষে হালুয়া-রুটি বিতরণের রীতি আছে, কিন্তু এটি ইবাদতের অংশ নয়। নিয়ত ঠিক রেখে দান করলে সওয়াব পাবেন।
৩. জোরপূর্বক ইবাদত: ইবাদতের জন্য নিজেকে ক্লান্ত করবেন না। সামর্থ্য অনুযায়ী আমল করুন।

উপসংহার

শবে বরাত হল আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা ও আত্মশুদ্ধির সুবর্ণ সুযোগ। এই রাতের আমল যেন শুধু রীতিনিষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে; বরং হৃদয়ের খুলুসিয়াত ও তওবার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য হয়। মনে রাখবেন, গুনাহ থেকে বিরত থাকা এবং আল্লাহর আনুগত্যেই প্রকৃত সাফল্য।

দোয়া:

“হে আল্লাহ! আপনি আমাদের শবে বরাতের সমস্ত ফজিলত দান করুন, আমাদের গুনাহ মাফ করুন, এবং আমাদের তাকদিরে কল্যাণ লিখে দিন। আমিন।”

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

শবে বরাতের ফজিলত ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল

আপডেট সময় : ১১:৫৯:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

শবে বরাতের ফজিলত ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল

ইসলামি বর্ষপঞ্জির শাবান মাসের ১৫ তারিখ রাতটি “শবে বরাত” বা “লাইলাতুল বারাআত” নামে পরিচিত। এই রাতটি মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও মহিমান্বিত। আরবি শব্দ “বারাআত” অর্থ মুক্তি, আর “লাইলাতুন” অর্থ রাত। এ রাতে আল্লাহ তাআলা বান্দাদের গুনাহ থেকে মুক্তি দান করেন এবং আগামী বছরের তাকদির নির্ধারণ করেন বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এই পবিত্র রাতের সঠিক আমল ও ইবাদত সম্পর্কে জানা প্রতিটি মুমিনের জন্য আবশ্যক।

শবে বরাতের ফজিলত

১. গুনাহ মাফের রাত: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

“শাবানের ১৫ তারিখ রাতে আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং মুশরিক, বিদ্বেষ পোষণকারী ও সম্পর্কচ্ছেদকারী ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন।” (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৯০)

 

৩. ইবাদতের বিশেষ সুযোগ: এই রাতে নফল ইবাদতের সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়।

শবে বরাতের আমল

১. নামাজ ও কুরআন তিলাওয়াত

  • নফল সালাত: এ রাতে ১২ রাকাত নফল সালাত আদায়ের কথা বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহার পর সুরা ইখলাস ১০ বার পড়া যায়। সালাত শেষে ১০০ বার ইস্তিগফার ও দরুদ পাঠ করুন।
  • কুরআন তিলাওয়াত: সুরা ইয়াসিন, সুরা দুখান, সুরা মুলক ও সুরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো (আমানার রাসুল) তিলাওয়াত করুন। এগুলো মৃত্যুযন্ত্রণা লাঘব করে ও রিজিকে বরকত আনে।

২. ইস্তিগফার ও দোয়া

  • “আস্তাগফিরুল্লাহাল আজিম আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।”
    (অর্থ: আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি মহান আল্লাহর কাছে, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। আমি তাঁর কাছেই তওবা করছি।)
  • দোয়ায় বেশি বেশি এই কথাগুলো বলুন:
    “আল্লাহুম্মা ইন্নিকা আফুয়্যুন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি।”
    (হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; তাই আমাকে ক্ষমা করুন।)

৩. মৃতদের জন্য দোয়া ও সদকা

  • কবরস্থানে গিয়ে মৃত আত্মীয়-স্বজনের জন্য দোয়া করুন। রাসুল (সা.) শাবানের মধ্যবর্তী দিনে (১৪ তারিখ দিবাগত রাত) জান্নাতুল বাকিতে গিয়ে মৃতদের জন্য দোয়া করতেন।
  • গরিব-দুঃখীদের মধ্যে খাবার, অর্থ বা কাপড় বিতরণ করুন। সদকায় বরকত বৃদ্ধি পায়।

৪. রোজা রাখা

শাবান মাসে নফল রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। রাসুল (সা.) শাবান মাসে সবচেয়ে বেশি নফল রোজা রাখতেন। (বুখারি: ১৯৬৯) ১৫ শাবানের দিন (দিনের বেলা) রোজা রাখলে অতীতের গুনাহ মাফ হয় বলে কিছু বর্ণনায় এসেছে।

৫. পরিবার-পরিজনকে নসিহত করা

এই রাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ইবাদত করুন, গুনাহ থেকে তওবার গুরুত্ব বোঝান। শিশুদের সাথে ইসলামি গল্প শেয়ার করুন।

সতর্কতা ও ভুল ধারণা

১. আতশবাজি বা অনর্থক কর্ম: কোনো প্রকার আতশবাজি, পটকা ফোটানো বা ইসলামবিরোধী কর্মে লিপ্ত হওয়া নিষেধ।
২. হালুয়া-রুটির অন্ধ বিশ্বাস: শবে বরাত উপলক্ষে হালুয়া-রুটি বিতরণের রীতি আছে, কিন্তু এটি ইবাদতের অংশ নয়। নিয়ত ঠিক রেখে দান করলে সওয়াব পাবেন।
৩. জোরপূর্বক ইবাদত: ইবাদতের জন্য নিজেকে ক্লান্ত করবেন না। সামর্থ্য অনুযায়ী আমল করুন।

উপসংহার

শবে বরাত হল আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা ও আত্মশুদ্ধির সুবর্ণ সুযোগ। এই রাতের আমল যেন শুধু রীতিনিষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে; বরং হৃদয়ের খুলুসিয়াত ও তওবার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য হয়। মনে রাখবেন, গুনাহ থেকে বিরত থাকা এবং আল্লাহর আনুগত্যেই প্রকৃত সাফল্য।

দোয়া:

“হে আল্লাহ! আপনি আমাদের শবে বরাতের সমস্ত ফজিলত দান করুন, আমাদের গুনাহ মাফ করুন, এবং আমাদের তাকদিরে কল্যাণ লিখে দিন। আমিন।”