জাতীয় পার্টির নির্বাচনী ইশতেহার
- আপডেট সময় : ১২:৪৮:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৪
- / ১০২৫২ বার পড়া হয়েছে
আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবে ভোটে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো। সে অনুযায়ী দলগুলোর প্রস্তুতিও চলছে।
সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) নির্বাচনী ইশতেহার এরই মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। কী থাকছে দলটির এবারের ইশতেহারে, এ নিয়ে জাগো নিউজকে বিভিন্ন ইঙ্গিতপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাপা চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরের তত্ত্বাবধানে এবারের ইশতেহার চূড়ান্ত করেছে দলটি। শিগগির জাপা চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে দলের মহাসচিব এ ইশতেহার ঘোষণা করবেন।
তবে তার আগেই মুজিবুল হক চুন্নু জানিয়েছেন, এবারের ইশতেহারে এমন কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, যা বড় রাজনৈতিক দলগুলোও হয়তো ভাবছে না।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ২৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে দুই হাজার ৭১২ প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাইয়ে বাদ পড়ে ৭৩১ জন প্রার্থীর মনোনয়ন।
এখন চলছে মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি, যা আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ দেবেন ১৮ ডিসেম্বর।
ওইদিন থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়ে চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি। জাপার দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবার ২৯৪টি সংসদীয় আসনে প্রার্থী দিয়েছে দলটি।
এরমধ্যে কয়েকজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, তাদের শুনানি চলছে। আগামী ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর ইশতেহার প্রকাশ করবে দলটি। জানা গেছে, দেশের চলমান বাস্তবতায় কর্মসংস্থান, বিকেন্দ্রীকরণ, বিচারব্যবস্থা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, অর্থপাচার রোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের ঘোষণা থাকবে জাতীয় পার্টির ইশতেহারে।
জানতে চাইলে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু জাগো নিউজকে বলেন, অনেক বিষয় যেগুলো বড় বড় রাজনৈতিক দল চিন্তাও করেনি, সেসব বিষয় আমাদের চেয়ারম্যান চিন্তা করে ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। পেপার ওয়ার্কও শেষ হয়েছে। মনোনয়নের সমস্যা দূর হলে আমরা প্রচার শুরু করবো।
তিনি বলেন, ইশতেহারে আমরা কর্মসংস্থানের দিকে গুরুত্ব দিয়েছি। এদেশে বেকার সমস্য প্রবল। লক্ষাধিক শিক্ষিত ছেলেমেয়ে বেকার বসে আছে। তাদের কোনো কাজ নেই।
আমাদের প্রধান টার্গেট দেশের বেকার ও শিক্ষিত সমাজকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেটি খুঁজে বের করা। যে শিক্ষায় বেকারত্ব তৈরি করে সেটি পরিবর্তন করে একটি কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা যায় কি না, তার রূপরেখা থাকবে দলের নির্বাচনী ইশতেহারে।
ইশতেহারে আমরা কর্মসংস্থানের দিকে গুরুত্ব দিয়েছি। এদেশে বেকার সমস্য প্রবল। লক্ষাধিক শিক্ষিত ছেলেমেয়ে বেকার বসে আছে। তাদের কোনো কাজ নেই। আমাদের প্রধান টার্গেট দেশের বেকার ও শিক্ষিত সমাজকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেটি খুঁজে বের করা
ইশতেহারে বিকেন্দ্রীকরণ বিষয়েও ঘোষণা থাকবে উল্লেখ করে জাপা মহাসচিব বলেন, আমরা চিন্তা করছি ঢাকা শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে। শিক্ষা, কর্মসংস্থান সবকিছুর জন্য ঢাকায় আসতে হচ্ছে। প্রাদেশিক সরকার গঠনের মাধ্যমে এটি আমরা বিকেন্দ্রীকরণ করতে চাই। আমরা পৌর ডিভিশনে একটি করে প্রাদেশিক সরকার চালু করতে চাই।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একবার প্রত্যেক উপজেলায় বিচারব্যবস্থা চালুর চেষ্টা করেছিলাম। উপজেলা পরিষদ ও সরকারি জজ কোর্ট এবং ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, ক্ষমতায় গেলে সেই বিচারব্যবস্থা আবার মানুষের দৌড়গোড়ায় নিয়ে যাবো। উপজেলায় বিচারব্যবস্থা নিয়ে যাবো। মেগা প্রকল্পের চেয়েও আমরা স্বাস্থ্যখাত অগ্রাধিকার দেবো। আমরা প্রত্যেক উপজেলায় বিশেষায়িত হাসপাতাল করতে চাই। এ বিষয়ে ইশতেহারে ঘোষণা থাকবে।
চুন্নু আরও বলেন, আমাদের অগ্রাধিকারে থাকবে অর্থপাচার প্রতিরোধ। ব্যবসার নামে এলসি খুলে টাকা পাচার করবে, লুটপাট করে দেশটা খালি করে দেবে, ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা মেরে বিদেশে চলে যাবে, এসব দুর্নীতি-লুটপাট আমরা চিরতরে বন্ধ করতে চাই। এ বিষয়টিও আমাদের ইশতেহারে থাকবে।
আমাদের অগ্রাধিকারে থাকবে অর্থপাচার প্রতিরোধ। ব্যবসার নামে এলসি খুলে টাকা পাচার করবে, লুটপাট করে দেশটা খালি করে দেবে, ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা মেরে বিদেশে চলে যাবে, এসব দুর্নীতি-লুটপাট আমরা চিরতরে বন্ধ করতে চাই
শিশু অধিকার নিশ্চিত করা, শিশুর জন্য পুষ্টি- শিক্ষা নিশ্চিত করার ঘোষণা থাকবে জাপার এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে। মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, কারিগরি শিক্ষা দিয়ে শিশুদের প্রশিক্ষিত করার কর্মসূচি আমাদের আছে।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৮ দফার ইশতেহার ঘোষণা করে জাতীয় পার্টি। ওই ইশতেহারে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন, নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার, বিচারব্যবস্থাকে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া, শিক্ষা পদ্ধতির সংস্কার, সহজ শর্তে কৃষিঋণ, চরাঞ্চলের কৃষকদের স্বার্থরক্ষা, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য স্থিতিশীল রাখা, ইউনিয়নভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা খাতের বিস্তৃতি ঘটানো এবং পল্লি রেশনিং ব্যবস্থা চালুর অঙ্গীকার ছিল।
ক্ষমতায় গেলে ‘তিন মাসের মধ্যে’ সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি সমূলে নির্মূল, প্রতিটি উপজেলায় কৃষিভিত্তিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার পাশাপাশি অনগ্রসর অঞ্চলে শিল্প স্থাপনে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল জাতীয় পার্টির একাদশ সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে।